ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সীমান্তঘেঁষা ছিমছাম গ্রাম আনোয়ারপুর। মেঠোপথে হাঁটতে হাঁটতে আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে যেতেই চক্ষুস্থির। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি বিদ্যাঙ্গন; তবে ঘুরতে ঘুরতে থমকে যেতে হলো আঙিনার এক কোণে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু খালি বোতল। কোনোটি ফেনসিডিল, কোনোটি আবার নতুন মাদক স্কুফের। খোঁজখবর নিলে স্কুলশিক্ষিকা হালিমা বেগম জানান, প্রতিদিন বিকেল হলেই দূর-দূরান্ত থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামে ঢোকে মাদকসেবীর দল। স্কুলমাঠে বসে ফেনসিডিল-স্কুফ খেয়ে খালি বোতল ছুড়ে ফেলে এদিক-ওদিক।
সর্বনাশা মাদকের এমন দৃশ্য দেখা যায় দেশের নানা প্রান্তে। কঠোর আইন প্রয়োগ, পুলিশি অভিযান, মামলা-গ্রেপ্তার, এমনকি ‘ক্রসফায়ারে’ও থামছে না মাদক আগ্রাসন। কারণ, মাদক-মাফিয়া চক্রে থাকে প্রভাবশালী ক্ষমতাধরদের ছায়া। রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী, আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও আছেন এ দলে। এসব তথ্য প্রায় সবারই জানা।
তবে সমকালের ৯ মাসের অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে, তা পিলে চমকানো! মাদক কারবারের অর্থনীতি এখন ভর করেছে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে। মূলধারার ব্যাংকের পাশাপাশি এখন বিপুল-বিস্তৃত মোবাইল ব্যাংকিংয়েও। এ পথেই ‘বৈধ উপায়ে’ ধুন্ধুমার লেনদেন হচ্ছে মাদক কারবারের টাকা। ফলে অতীতের মতো দ্রুত ছড়াচ্ছে মাদকের বিষ!
মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে কারবারিরা কীভাবে মাদক বেচাকেনার টাকা লেনদেন করে, তা খুঁজতে তথ্য তালাশে নামে সমকাল; অত্যাধুনিক ডিজিটাল লেনদেনের নানা চ্যানেলে রাখে চোখ। অবশেষে সমকালের গভীর অনুসন্ধানে ধরা পড়ে কয়েকজন রাঘববোয়াল।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন :মো. হামিদ। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ভারুয়াখালীতে তাঁর বাস। ছিলেন দর্জি, তাই ‘দর্জি হামিদ’ নামেই এলাকায় পরিচিত। এক দৌড়ে সম্পদের চূড়ায় ওঠার লোভে জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। ২০১৮ সালে চকরিয়ায় ৪০ হাজার ইয়াবাসহ ধরা পড়েন তিনি। দুই বছর কারাবাসের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর গত নভেম্বরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রির ঘটনায় মো. হোসেন, লাল তন পাংখোয়া, মো. আলী আকবর ও আদিলুর রহমান নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। চক্রটি অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করছিল। জবানবন্দিতে পুলিশকে তাঁরা অস্ত্রের নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ইয়াবার একটি চক্রের কথাও জানান। চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামিদ।
সমকালের অনুসন্ধানের একপর্যায়ে সিআইডির মানি লন্ডারিং ইউনিটের একটি সূত্রে জানা যায়, হামিদ কারাগার থেকে বেরিয়ে এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের মাধ্যমে ইয়াবা-রাজ্যে প্রবেশ করেন। সিআইডির ওই ইউনিট থেকেই মেলে হামিদের মাদক কারবারের বড় এক সহযোগীর নাম আর মোবাইল ফোন নম্বর; ভোলায় তাঁর বাস (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না)। হামিদের ওই সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে তুলতেই কেটে যায় প্রায় তিন মাস। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর কাছ থেকে জানা যায় হামিদের কুকীর্তির নানা চোরাপথ।
ফলো করুন-
ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন সমকাল ইউটিউব
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ডিজিটাল মাধ্যমে মাদকের জাল আরও শক্তিশালী করেছেন হামিদ। জেলায় জেলায় ইয়াবা কারবার চালাতে এজেন্টও আছে তাঁর। নিজের এলাকা কক্সবাজারের রহিম উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাদকের টাকা লেনদেন করেন তিনি। হামিদ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন ০১৭৯৬৭২৪২৬৬ ও ০১৮৫১২১৭২৭৪- এ দুটি মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে। আর বিকাশের ০১৮৮২৯১৮২৭৬- এই ব্যক্তিগত নম্বর ব্যবহার করে ইয়াবা বেচাকেনার টাকা লেনদেন করছে এই চক্র। নম্বরটির টাকা লেনদেনের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট থেকে গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ১২ মাসে ৩১ লাখ ২৬ হাজার ১৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ বার। গড় করলে একেকবারে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩০৪ টাকা ১৪ পয়সা।
অনুসন্ধান বলছে, মাদক কারবারি হামিদ বেশ ধুরন্ধর। সবকিছুতেই তাঁর নিখুঁত পরিকল্পনা। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে তৈরি করেছেন জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। তিনি মাদক বেচাকেনার আলাপ চালাতেন ০১৭৯৬৭২৪২৬৬ নম্বর ব্যবহার করে, জাল কাগজপত্র দিয়েই তিনি ওই নম্বরের সিমকার্ডটি কেনেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিমকার্ড কেনার সময় হামিদ ছবি দিয়েছেন অন্যজনের। ছবিটি কক্সবাজার সদরের ঈদগাহ এলাকার গিয়াস উদ্দিনের। হামিদের আর্থিক নেটওয়ার্ক দেখভাল করেন যে রহিম উল্লাহ, তাঁর বিকাশ নম্বরটি (০১৮৮২৯১৮২৭৬) জাহেদা ইয়াসমিন নামের এক নারীর নামে নিবন্ধন করা। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭৩৪২৯৯০৮০৬।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে হামিদ প্রথমেই প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আমার নম্বর কোথায় পেলেন?’ মাদক কারবারের বিষয় তুললে তিনি বলতে থাকেন, ‘আপনে রং নম্বরে ফোন করেছেন। এলাকায় খোঁজ নেন। আমার মতো ভালো মানুষ কক্সবাজারে দুইটা খুঁজে পাবেন না। কে বলেছে, আমি মাদক কারবারি? কাজ করে ঘাম ঝরায়ে খাই। হামিদ নামে আরেক মাদক কারবারি আছে টেকনাফে। আপনাকে হয়তো কেউ বিভ্রান্ত করছে। কেন মাদক কারবারি হিসেবে আমার নাম আসবে? কেউ শত্রুতা করে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমি সাদামাটা মানুষ, ভাই।’
এসব কথা বলে ফোন কেটে দেওয়ার পরই হামিদের দুটি সিমসহ বিকাশের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে হামিদের একাধিক ভয়েস রেকর্ড সমকালের হাতে আসে। এর একটিতে এক কারবারির উদ্দেশে হামিদকে বলতে শোনা যায়, ‘দু-এক দিনের মধ্যে তোদেরকে নতুন নম্বর দেব। আগের নম্বরে ফোন করিস না। এক সাংবাদিক আমার পিছে লাগছে। সব নম্বর জেনে গেছে। নতুন নম্বর পরে ফোন করে জানাব। মাল (ইয়াবা) কোথায় যাবে, তাও জানায়ে দেব।’ আরেকজনকে হামিদ বলছিলেন, ‘সুজন, মাল বিক্রির টাহাডা পাঠায়ে দিবি। পরে নতুন নম্বর দেব।’ পরে সুজনের নম্বর ০১৮৬৭৩৯২৮৪৭-তে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী। হামিদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমি ইয়াবা কারবারি না।’
হামিদের সহযোগী রহিম উল্লাহকে ফোন করে মাদকের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বিকাশের নম্বরটি হায়াত আলী নামের আমার এক ভাইয়ের। এটি কিছুদিন ধরে আমি ব্যবহার করছি।’
‘ওই নম্বর দিয়ে মাদক কারবারের টাকা লেনদেন হচ্ছে’- কথাটি বলতেই রহিম উল্লাহ কোনো মন্তব্য না করেই ফোন কেটে দেন। এর পর থেকে নম্বরটি এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আর খোলা পাওয়া যায়নি।
খুঁজতে খুঁজতে রহিমউল্লাহর গ্রামে :কক্সবাজার সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভারুয়াখালীর সওদাগরপাড়া। ওই গ্রামের উত্তরে চৌফলদণ্ডী-ভারুয়াখালী আর দক্ষিণে খুরুস্কুল নদী, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। ঘনবসতিপূর্ণ নির্জন গ্রামের সরু পথ ধরে গত ২১ সেপ্টেম্বর ওই পাড়ায় পৌঁছার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া যায় রহিমউল্লাহর বাড়ির ঠিকানা। গ্রামের ভেতরে ছিমছাম একতলা বাড়ি। চারপাশে প্রাচীর। রহিম উল্লাহর মা জান্নাতুল ফেরদৌস ও তাঁর আরেক ছেলেকে পাওয়া গেল। তাঁরা জানান, ভারুয়াখালী বাজারে নিজের ইলেকট্রনিকস দোকানে আছে রহিম। ছুটলাম বাজারের দিকে। ইলেকট্রনিকসের দোকানের পাশাপাশি ‘ইত্যাদি মোবাইল শপ’ রয়েছে তাঁর। বিকাশের এজেন্টও রহিম। ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর (০১৮৮২৯১৮২৭৬) থেকে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দু-তিন বছর ধরে সিমটি খুঁজে পাচ্ছি না। এনআইডি করার সময় ওই নম্বরটি দিয়েছিলাম। আর সেই নম্বরের বিকাশের নিবন্ধন করা জাহেদা ইয়াসমিনের নামে। জাহেদা তাঁর প্রবাসী ভাই মনজুর আলমের স্ত্রী। তিনি গৃহিণী।’
‘এই বিকাশ নম্বরটি মাদক কারবারে ব্যবহার করেন হামিদ’- এমন প্রসঙ্গ তুললে রহিমউল্লাহ বলেন, ‘সেটা আমার জানা নেই। যদি কোনো মাদক কারবারি সেটা ব্যবহার করে, তাহলে সিমটি বাতিলের জন্য আবেদন করব।’
‘গত মাসে ফোন করা হলে আপনি বলেছিলেন, অল্প কিছুদিন হলো আপনি সিমটি ব্যবহার করছেন। আর আজ বলছেন, সিমটি দু-তিন বছর ধরে বেহাত’- কোনটা সঠিক? প্রশ্ন করতেই রহিমউল্লাহ এলোমেলো কথা বলতে বলতে দ্রুত দোকানের শাটার নামিয়ে তালা মেরে সটকে পড়েন।
গৃহিণীর বিকাশে ৬২ লাখ টাকা লেনদেন : গোলতাজ বেগমের বাড়িও কক্সবাজারের কলাতলীতে। ০১৬২৪৬৯০৯৫০ নম্বরের সিমটি তাঁর নামে নিবন্ধিত। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ রফিক, বাবা আবুল কাশেম। ২০২১ সালের ৩০ জুলাই থেকে গত ২৬ জুলাই পর্যন্ত গোলতাজের ব্যক্তিগত বিকাশ লেনদেনের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ১২ মাসে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭২০ বার। লেনদেনের পরিমাণ ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৯ টাকা। ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ১৮৩ বার। ওই বিকাশ নম্বরে লেনদেনকারীর মধ্যে একজন জামালপুরের আবদুস ছামাদ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মাদক প্রতিরোধ দলের তালিকায় আছে এই ছামাদের নাম; মাদকভুবনে তিনি পরিচিত মো. বাবু নামে।
সিমের মালিক গোলতাজ বেগম বলেন, “এই নম্বরে এত টাকা লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। আমার স্বামী ট্রাক চালায়। করোনার সময় যখন সব গাড়ি বন্ধ ছিল তখন কলাতলীতে ‘মায়ের দোয়া’ নামে ছোট্ট কসমেটিকসের দোকান খোলা হয়। ছেলে মো. হাসান আর কর্মচারী রিয়াজ উদ্দিন মিলে চালায়। আর স্বামীর নামে নেওয়া বিকাশের একটি এজেন্ট নম্বরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা চালায়। মাসে দু-একবার দোকানে গিয়ে বসি। ০১৬২৪৬৯০৯৫০ নম্বরটি দোকানে কথা বলতে রাখা হয়েছিল। কিছুদিন আগে প্রতারণা করে ওই নম্বর থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। পরে নম্বরটি বন্ধ করে দিয়েছি।” আর দোকান কর্মচারী রিয়াজ বললেন, ‘যে সেটে ওই সিমটি ছিল, সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সিমটি আর অন্য মোবাইলে ঢোকানো হয়নি।’
আরও দুই রাঘববোয়াল :ঢাকার শাহবাগ থানায় গত ১৩ জুন পুলিশ বাদী হয়ে পিয়ারুল ইসলাম, ফারজানা, খবির উদ্দিন ও শাহানুর ইসলামের নামে মাদক মামলা (নম্বর-১৯) করে। এর মধ্যে পিয়ারুল ও ফারজানার নামে রাজধানীর মুগদা ও রামপুরা থানায় আছে আরও মাদক মামলা। পুলিশ শাহানুরকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও অন্যরা অধরা।
তাঁরা কোথায় আছেন, না জানলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি ও সমকালের অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তথ্য মেলে, বড় মাপের হেরোইন কারবারি পিয়ারুল এখন মজে আছেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। যে দুটি বিকাশ নম্বর (০১৩১২৮০২২২৫ ও ০১৭৫৫৮০২২২৫) ব্যবহার করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেরোইন বেচাকেনার টাকা পাঠায় পিয়ারুল চক্র, তা সমকালের হাতে এসেছে। এ ছাড়া অন্য আরেকটি নম্বরের (০১৬৩৯৫৫০১৮০) মাধ্যমে পিয়ারুল নারায়ণগঞ্জে ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিয়ারুলের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মানিকচক এলাকায়, আর ফারজানার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। মাসে অন্তত চারটি হেরোইনের চালান বাহকের মাধ্যমে ফারজানার কাছে পাঠাতেন পিয়ারুল। একেকটি চালানে কমপক্ষে ২০০ গ্রাম হেরোইন থাকে। ফারজানা হেরোইন বেচাকেনার টাকা লেনদেনে তাঁর বান্ধবী রুমা বেগমের মোবাইল নম্বর (০১৭১৮৩৮২৫৭৯) ব্যবহার করেন। মূলত ফারজানার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করেন রুমা। হেরোইন কারবারি রুমার স্বামী মোস্তফা। তিনি থাকেন মুন্সীগঞ্জের নিমতলীতে। সেখানে আছে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই থেকে গত ২৭ জুন পর্যন্ত রুমার মোবাইল ব্যাংকিং নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই ১১ মাসে ১১০ বারে তাঁর নম্বরে ৮ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকা লেনদেন হয়েছে। একেকবারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা হয়েছে।
ফোন করে জানতে চাইলে রুমা সমকালকে বলেন, ‘বছর পাঁচেক আগে যাত্রাবাড়ীতে থাকার সময় ফারজানার সঙ্গে আমার পরিচয়। ফারজানা বিপদে পড়ায় তিন মাস আগে এক জায়গা থেকে দুই লাখ টাকা তুলে দিই। প্রতি মাসে কিস্তির টাকা পাঠান ফারজানা। তবে ফারজানা হেরোইন বিক্রেতা কিনা, তা জানা নেই। তাঁর নামে মামলা আছে কিনা, সেটাও জানি না।’ হেরোইন বিক্রির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা সরাসরি অস্বীকার করেন রুমা। তবে ফারজানার সঙ্গে মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ কথা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
‘ক্ষুদ্র চা-বিক্রেতা হয়ে মাসে মাসে কীভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লাখ লাখ টাকা লেনদেন করেন’- এমন প্রশ্নে রুমার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী কিছুদিন ধরে অসুস্থ। অনেকে সহযোগিতা করে মোবাইলে টাকা পাঠায়।’ ‘স্বামীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে সাহায্য চেয়ে কোথাও বিজ্ঞাপন কিংবা নিউজ করিয়েছেন নিশ্চয়। না হলে লোকজন কীভাবে আপনার নম্বর জেনে টাকা পাঠাবে?’- এমন প্রশ্ন তুললে রুমা আর কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এই নারীর মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ধরনই বলছে, একসঙ্গে এত টাকা চিকিৎসা সহায়তার জন্য কেউ পাঠাবে না। বছরজুড়েই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের সহযোগিতা স্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে রুমার হিসাব নম্বরে টাকা ঢুকছে। রুমার ওই ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে লেনদেনের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, সর্বশেষ গত ২৭ জুন ০১৯৭০৮৯৩৪৬৭ নম্বর থেকে রুমার কাছে ২৪ হাজার ৯৬৫ টাকা এসেছে। গত ১৮ মে ০১৫১১৫১১৫৭১ নম্বর থেকে রুমার নম্বরে ঢুকেছে ১৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া ০১৯৭০৮৯৩৪৬৭ নম্বর থেকে ১৬ দফায় রুমার নম্বরে ঢুকেছে ৯৮ হাজার ৩০৫ টাকা।
ওই নম্বরে (০১৯৭০৮৯৩৪৬৭) কল করলে সোহেল নামের একজন ফোন ধরে জানান, তিনিই সিমটির মালিক। রুমার বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর প্রসঙ্গ তুললে সোহেল দাবি করেন, রুমা তাঁর আপন বোন। ওই নম্বরে কখনও কোনো টাকা পাঠাননি তিনি।
তবে সমকালের হাতে আসা ডিজিটাল তথ্য বলছে, রুমার নম্বরে গত বছরের ২৮ জুলাই থেকে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ১১ মাসে ১৬ বার বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছেন সোহেল।
এদিকে, পলাতক পিয়ারুলের দুটি ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের নথিও সংগ্রহ করে সমকাল। ওই দুটি সিমকার্ডই পিয়ারুলের নামে নিবন্ধন করা। এর মধ্যে ০১৩১২৮০২২২৫ নম্বরের বিপরীতে তাঁর ব্যক্তিগত বিকাশ হিসাব। গত ৮ মার্চ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৬৬ বারে লেনদেন হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তাঁর আরেকটি বিকাশ (০১৭৫৫৮০২২২৫) নম্বরে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই থেকে গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৩৬১ বার লেনদেন হয়েছে। ১২ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এই হেরোইন কারবারির হিসাবে জমা হয় ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। পিয়ারুলের নামে নিবন্ধন করা (০১৭৫৫৮০২২২৫) নম্বরে গত জুলাইয়ে যোগাযোগ করা হলে পারভেজ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তিনি শিবগঞ্জের সুন্দরপুরের বাসিন্দা, পেশা কৃষিকাজ। বছর দেড়েক আগে তাঁর দূরসম্পর্কের এক খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে সিমসহ ফোনটি পেয়েছেন তিনি। এই ফোনে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য তাঁর জানা নেই।
তবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পিয়ারুলের মুখোমুখি হয় সমকাল। তখন তিনি জানান, দুটি নম্বরই তাঁর। পরিচয় এড়াতে তিনি নিজের নাম পারভেজ বলে চালিয়েছেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাদক কারবার চালানোর কথাও তিনি সমকালের কছে অকপটে স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং খাতে দেশে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩০। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশসহ মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছে। আর ওই অর্থবছরে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটের দেড় গুণের বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আর শুধু গত জুনেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এই বিপুল টাকার ঠিক কত অংশ মাদক বেচাকেনায় লেনদেন হয়েছে, তার হিসাব কারও জানা নেই। তবে সমকালের অনুসন্ধানের ফল এবং দেশে মাদক বিস্তারের ভয়াবহতা দেখে ধারণা পাওয়া যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর ভর করে মাদকের টাকা লেনদেনের অঙ্ক আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
মূলধারার ব্যাংকিং চ্যানেলেও মাদক :সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- শুধু মোবাইল ব্যাংকিং নয়, মূলধারার ব্যাংকিং চ্যানেলেও মাদক কারবারের টাকা ধুমছে লেনদেন হচ্ছে। এই তালিকায় নাম আছে ‘ইয়াবার রাজধানী’ বলে পরিচিত টেকনাফের নুরুল হুদার। টেকনাফের পশ্চিম লেদা এলাকার রঙ্গিখালী এলাকায় তাঁর বাড়ি। তাঁর নামে ২১ মাদক মামলার তথ্য মিলেছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি তিনি। সর্বশেষ নির্বাচনে হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। কয়েক বছর আগেও দারিদ্র্যের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল যাঁর কষ্টসাধ্য, সেই হুদা এখন অন্যতম বিত্তশালী। নাফ নদের অদূরে তাঁর ডুপ্লেক্স বাড়ি। দেয়াল, প্রধান ফটক, বাসার নকশা- সবকিছুতে বিলাসের ছাপ। চলচ্চিত্রের গল্পের মতো হুদা তাঁর জীবনের মোড় যেভাবে ঘোরালেন, তাতে মোটেও বিস্মিত নন এলাকাবাসী। কারণ তাঁরা জানেন, হুদার জাদুর কাঠি ইয়াবা ও নাফ নদ। একসময় লবণের ট্রাকের দিনমজুর ছিলেন হুদা। আবার কখনও ট্রাকের হেলপারের কাজও করেন।
সমকালের অনুসন্ধান বলছে, হুদা এতটা বেপরোয়া যে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলেও নিয়মিত মাদকের টাকা স্থানান্তর করতেন। এ কাজে তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন দুই ভাই আরশাদ ও রমজান। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর কুড়াপাড়ায়। ঢাকার দক্ষিণ গোড়ানে তাঁদের বাস। এ দুই সহোদরের বিরুদ্ধে টঙ্গিবাড়ী, খিলগাঁও, পল্টন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
সমকালের হাতে আসা কিছু ব্যাংকিং নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকার এ দুই মাদক কারবারির সঙ্গে পশ্চিম লেদার ইউপি সদস্য হুদার ব্যাংকিং যোগাযোগ ছিল। দৃশ্যমান আয়ের কোনো উৎস নেই আরশাদ ও রমজানের। তবে তাঁদের ব্যাংকিং হিসাব থেকে ৭৮টি জমার মাধ্যমে নুরুল হুদার হিসাব নম্বরে ২০১৩ সালের ২১ মে থেকে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা পাঠান দুই ভাই। মাদকের টাকা লেনদেন করতেই নুরুল হুদা ও তাঁর দুই সহযোগী বিভিন্ন ব্যাংকে বেশ কিছু হিসাব নম্বর খোলেন। যখন তাঁরা এসব হিসাব খোলেন, সে সময় তাঁদের বৈধ আয়ের বড় কোনো উৎস ছিল না।
নুরুল হুদার যেসব হিসাব নম্বরে মাদকের টাকা স্থানান্তর হয়েছে, এর একটি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় কায়সার ফিশিংয়ের নামে হিসাব নম্বরটি (১০২১০২০০০১০৬৩)। এটি নুরুল হুদা খুলেছিলেন ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ। এখন ওই হিসাবে জমা আছে ১৮ লাখ ৭২১ টাকা। তবে হিসাবটি খোলার পর সেখানে মোট জমা হয় ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। হুদার আরেকটি হিসাব (০২৬১১১০০২১২১৭) ইউনিয়ন ব্যাংক, হ্নীলা শাখায়। ২০১৮ সালের ১১ মার্চ ওই হিসাব নম্বর খোলার পর সেখানে নানা সময় জমা হয় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৯ টাকা। বর্তমানে ওই হিসাবের স্থিতি ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল হ্নীলা শাখাতেই হাজী কাশেম পোলট্রি ফার্মের নামে আরেকটি হিসাব (০২৬১০১০০০২৮৮৯) খোলেন তিনি।
‘একটি উপজেলা থেকে কারও হিসাব নম্বরে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও কেন তা অস্বাভাবিক হিসেবে কর্মকর্তাদের নজরে আসবে না’- এমন প্রশ্নের জবাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক ফরিদুল আলম বলেন, ‘টেকনাফের পাশে মিয়ানমার সীমান্ত। এ এলাকা ঘিরে মাদকের জাল। এ কারণে ব্যাংকিং লেনদেনে বেশি সতর্ক থাকি। যখন কেউ হিসাব খোলেন, তাঁর বার্ষিক লেনদেনের সর্বোচ্চ অঙ্ক উল্লেখ করা হয়। যদি হঠাৎ কেউ বেশি টাকা জমা দিতে আসেন, তাঁর আয়ের উৎস জিজ্ঞেস করা হয়। সম্প্রতি এক ব্যক্তি ৮ লাখ জমা দিতে ব্যাংকে এসেছিল। টাকার উৎস জানতে চাওয়ার পর সে জমা না দিয়ে ফিরে যায়। আমাদের ওপর কড়া নির্দেশনা রয়েছে, যাতে ব্যাংক লেনদেনের আড়ালে মানি লন্ডারিং না হতে পারে। টেকনাফ শাখার হিসাব থেকে মাদকের টাকা লেনদেন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই হিসাবটির ব্যাপারে আমার খোঁজখবর নিতে হবে।’
হুদার ইয়াবা কারবারের অংশীদার রমজান ও আরশাদের ব্যাংকিং নথিতেও আছে চমকপ্রদ তথ্য। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই, তবে মাথার ওপর রয়েছে মাদকের মামলা- এমন দুই ভাইয়ের একাধিক ব্যাংক হিসাবে লেনদেন লাখ লাখ টাকা। আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের মৌচাক শাখায় দুই ভাইয়ের যৌথ হিসাব নম্বর ০২৪১১২০০৮৬৭৩৬। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হিসাবটি খোলা হয়। এখন পর্যন্ত ওই হিসাবে জমা হয়েছে ৮৩ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৫ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের মগবাজার শাখায় আরেকটি হিসাব (১৫০৩১০১৬৬৩৮৮৯০০১) রয়েছে আরশাদের। ২০১০ সালে হিসাবটি খোলার পর থেকে সেখানে জমা হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের একই শাখায় আরশাদের আরেকটি হিসাব নম্বর রয়েছে। ২০১১ সালের ২৭ জুন হিসাবটি খোলার পর সেখানে জমা হয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৬ টাকা। মগবাজারের একই ব্যাংকের আরেকটি হিসাব নম্বরে আরশাদের জমার পরিমাণ ৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৯ টাকা। ২০১২ সালে ঢাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসে খোলা আরেকটি হিসাবে (১০১১০১০২৯৫৫৪) আরশাদের টাকার পরিমাণ ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮০৪ টাকা। বিজয়নগর শাখার সিটি ব্যাংকে যৌথ হিসাব নম্বর আছে দুই ভাইয়ের। সেটি খোলা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সেই হিসাবে জমা ছিল ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫২ টাকা।
‘ভুল করেছি’ :নিজেদের ব্যাংকিং হিসাব নম্বরে মাদকের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. আরশাদ সমকালকে বলেন, ‘এটা জীবনের একটা বড় ভুল ছিল। এ জন্য অনেক মূল্য দিয়েছি আমরা দুই ভাই। আট মাস কারাগারেও ছিলাম। এখন জামিনে আছি। সরকার সুযোগ দিলে নিজের জীবন বদলে নেব। এখন একটি বেসরকারি চাকরিও শুরু করেছি।’
গত ২২ এপ্রিল এলাকায় গিয়ে নুরুল হুদার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একসময় না বুঝে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়েছি। বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে আত্মসমর্পণ করি। জেলখানা থেকে বের হয়ে আর ওই কারবারে জড়াইনি। এখন নিজের ব্যবসা নিয়ে আছি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য :জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে যাতে মাদক কারবারিরা টাকা লেনদেন করতে না পারে, সেটা দেখভাল করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলেই যাতে ওই হিসাবধারীর ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়, এ ধরনের নির্দেশনা সব ব্যাংককে দেওয়া আছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকেও একই ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশ বহুবার দেওয়া হয়েছে।
বিকাশ যা বলছে :দেশের প্রধান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ-এর হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কোনো হিসাব নম্বরে সন্দেহজনক লেনদেন বা কর্মকাণ্ডের আভাস পেলেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউকে জানানোর জন্য বিকাশের আলাদা টিম আছে। অ্যান্টিমানি লন্ডারিং ইস্যুতে স্বতন্ত্র টিম কাজ করছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাপারে কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে তাদের দ্রুত সরবরাহ করা হয়। সুত্র : সমকাল
পাঠকের মতামত